অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন পদ্ধতি

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বলতে সরকার নির্ধারিত নিবন্ধকের অফিসে ব্যবসায়ের নাম তালিকাভুক্ত করাকে বুঝায়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এলাকার নিবন্ধকের কার্যালয়ে রক্ষিত বইতে অংশীদারি ব্যবসায়ের নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধকরণকে অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বলা হয় ।

১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৫৮ ধারা অনুযায়ী কোনো অংশীদারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করতে হলে প্রথমত নিবন্ধকের অফিস হতে নির্ধারিত ফি জমাপূর্বক একটি ফর্ম/ আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনপত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করে চুক্তিপত্র ও গঠনতন্ত্রসহ নিবন্ধকের অফিসে জমা করতে হবে। সাধারণত আবেদনপত্রে নি লিখিত বিষয়সমূহ উল্লেখ করতে হয়—

১. অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের নাম;
২. প্রধান অফিসের ঠিকানা:
৩. অন্য কোথাও ব্যবসায়ের শাখা অফিস থাকলে তার ঠিকানা;
৪. ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য ও আওতা;
৫. ব্যবসায়ের মেয়াদ (যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হয়);
৬. প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তারিখ;
৭. প্রত্যেক অংশীদারের নাম, ঠিকানা, পেশা
৮. অংশীদার হিসেবে যোগদানের তারিখ ইত্যাদি ।

আবেদনপত্রটি প্রত্যেক অংশীদার কর্তৃক বা তার উপযুক্ত / আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। নিবন্ধক আবেদনপত্র ও চুক্তিপত্রটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলে ব্যবসায়টি তালিকাভুক্ত করবেন। চুক্তিপত্র কিংবা আবেদনপত্রের কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোগ ও বিয়োজন করতে হলে নিবন্ধকের অনুমতি নিতে হবে এবং তা সম্বন্ধে তাকে অবহিত করতে হবে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন কি বাধ্যতামূলক (Is Registration of a Partnership Business Compulsory)

নিবন্ধন অংশীদারি ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হলেও বাঞ্চনীয় বটে। কারণ অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধিত হলে এর আইনগত ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনায় বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করে। নিবন্ধন অংশীদারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

অংশীদার ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হলেও বাঞ্ছনীয় বটে। কারণ অংশীদারি ব্যবসায়ে নিবন্ধিত হলে পরবর্তীকালে অংশীদারগণের মধ্যস্থিত সম্ভাব্য কলহ অথবা তৃতীয় পক্ষের সাথে দেনা- পাওনা নিষ্পত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সহায়ক হয়। নিবন্ধন করলে ব্যবসায়ের চুক্তিপত্রটি আইনসম্মত দলিলরূপে স্বীকৃতি লাভ করে। বস্তুত: নিবন্ধন অংশীদারি ব্যবসায়ের অস্তিত্ব প্রকাশ করে। তাছাড়া নিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় কতকগুলো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে ।

অংশীদারি আইনের ৬৯ (১) ধারা মতে, অংশীদারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত না হলে, বা নিবন্ধন বহিতে সংশ্লিষ্ট অংশীদারের নাম লিখিত না থাকলে কোনো অংশীদার অপর অংশীদার বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি হতে উদ্ভূত অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করতে পারবে না ।

পরিশেষে বলা যায় যে, অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধন আইনত বাধ্যতামূলক নয়। তবে অংশীদারগণ ভবিষ্যৎ সুযোগ-সুবিধার জন্যে নিবন্ধন করে নিতে পারে। কারণ সংগঠন নিবন্ধন করা বা না করা অংশীদারদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে একথা সত্য যে, নিবন্ধন করা হলে কতিপয় আইনগত সুবিধা পাওয়া যায়। তাই এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করাই উত্তম।

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন না করার পরিণাম (Consequences of Non-Registration of Partnership Business)

১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনে ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে নিবন্ধিত অংশীদারি ফার্ম ও অংশীদারকে বেশ কিছু সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাই অনিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় ও এর সদস্যগণ নিবন্ধিত ব্যবসায়ের তুলনায় কিছুটা অসুবিধাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় ।

১। পাওনা আদায়ের সমস্যা (Problem in collecting credit): অ-নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ১০০ টাকার বেশি পাওনা আদায়ের জন্য মামলা করতে পারে না। [৬৯(৪) ধারা]

২। তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলায় সমস্যা (Problem in submit case against third party): অ-নিবন্ধিত অংশীদারি কারবার তার কোনো অধিকার আদায়ের জন্য তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না। কিন্তু তৃতীয় পক্ষ তার কোনো অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অনিবন্ধিত অংশীদারি কারবারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।

৩। চুক্তিজনিত অধিকার আদায়ের সমস্যা (Problem in Established right in contract): অনিবন্ধিত অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে চুক্তিজনিত কোনো অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কোন অংশীদার অন্য কোনো অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না । [৬৯(১) ধারা]

৪। স্বার্থরক্ষা (Protect interest) : স্বার্থ আদায়ের জন্য কোনো অংশীদার অপর কোনো অংশীদার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না।

৫। পারস্পরিক মামলা দায়ের-এ সমস্যা (Problem in case file against each other): অনিবন্ধিত অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারগণ পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত মেনে চলার জন্য আদালতে মামলা করতে পারে না। 

তবে উপরিউক্ত অসুবিধাগুলো থাকা সত্ত্বেও অনিবন্ধিত অংশীদারগণের নিম্নোক্ত অধিকারগুলো বলবৎ থাকে—

i. নিজ পাওনা বুঝে পাওয়ার অধিকার: বিলোপ সাধনকৃত ব্যবসায় হতে অংশীদারগণের পাওনা বুঝে নেয়ার অধিকার আছে।
ii. বিলোপসাধন ও হিসাব সংক্রান্ত অধিকার: অনিবন্ধিত অংশীদারি সংগঠনের অংশীদরগণ ব্যবসায় বিলোপ সাধন ও হিসাব সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা করতে পারে।
iii.প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি উদ্ধারের অধিকারঃ অনিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠনের অংশীদারগণ হিসাব-নিকাশ ও সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আদালতে মামলা করতে পারে । 

iv. চুক্তিজনিত অধিকার: কোনো অংশীদার চুক্তি ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে ।\

১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুসারে নিবন্ধিত অংশিদারি ব্যবসায় যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

ক. অংশীদারগণ পাওনা আদায়ের জন্য তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে;
খ. অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এক অংশীদার অন্য অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না;
গ. এরূপ ব্যবসায়ে তৃতীয় পক্ষকে চুক্তি পালনে বাধ্য করার জন্য মামলা করতে পারবেন; ঘ. তৃতীয় পক্ষ দাবি আদায়ের জন্য কোনো অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করার অধিকার আছে;
ঙ. প্রত্যেক অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে লাভ-লোকসান হিসাবের পর অংশীদারগণের নিজেদের আয়কর প্রদান করতে হয়, ফলে ঝামেলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়;
চ. প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হলে আইনগত মর্যাদা পায়। ফলে এরূপ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট মর্যাদা পেয়ে থাকে ।

পরিশেষে বলা যায় যে, অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠন নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক না হলেও ভবিষ্যতে ভুল বুঝাবুঝি নিরসনের জন্যে এবং অংশীদারদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এরূপ ব্যবসায় সংগঠনের নিবন্ধন করা বাঞ্ছনীয় হবে।

Content added By
Promotion